নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিজিবি সিপাহী রইশুদ্দীনের নিথর দেহ তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাহাপাড়া-শ্যামপুরে পৌঁছেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাঁর মরদেহবাহী একটি হেলিকপ্টার শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এর আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী-বিএসএফের গুলিতে রইশুদ্দীন নিহত হলে দু’দিন পর মরদেহ ফেরত পায় বিজিবি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে। সেখান থেকে আকাশ পথে হেলিকপ্টার যোগে রইশুউদ্দীনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে।
পরে রইশুউদ্দীনের পরিবারের সদস্যরা মরদেহটি বুঝিয়ে পেলে বিজিবির নিরাপত্তায় সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহটি। মরদেহ বুঝিয়ে দেয়ার সময় নিহতের পরিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি ও যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে শোকে এলাকা ভারি হয়ে উঠে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে বিজিবি সিপাহী রইশুদ্দীনের নিজ গ্রামের শ্যামপুর নুরেস মোড় এলাকায় জানাযা শেষে শ্যামপুর ভবানীপুর কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এদিকে, স্বামীর পৈত্রিক ভিটায় পৌছার পর স্বামীর মরদেহ নিয়ে বিলোপ করছিলেন রইশুদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন বেগম। আর দাদা ও নানার কোলে ২ বছর বয়সী শিশু রাইশা খাতুন ও ৪ মাস বয়সী হাসান আলী এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। পিতা এত কাছে কফিনে শুয়ে থাকলেও সন্তানরা যেন কাঁদতে ভুলে গেছে। মায়ের বুক ফাটা আত্মনাদ নিহত রইসউদ্দীনের মা রুমালি বেগমের। মরদেহ বাড়িতে আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা মৃত রইসউদ্দীন কে একনজর দেখতে ভিড় করে। রইশুদ্দীনের কফিনের উপর মুড়িয়ে দেয়া ছিল বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পতাকা। আশে পাশের পরিবেশ যেন কান্নার আহাজারিতে ভারী হয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের শ্যামপুরে রইসউদ্দীনের বাড়ির সামনের চিত্রটি ছিল এমনই।
কৃষক কামরুজ্জামানের ৩ ছেলের মধ্যে রইস ছিল এলাকার প্রিয় মানুষ। গ্রামের সকলের বিপদে আপদে পাশে থাকায় স্বজনদের পাশাপাশি বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মধ্যেও ছিল আত্ননাদ। অল্প বয়সে এমন মৃত্যু কেউ যেন মেনে নিতে পারছেননা।এসময় গ্রামবাসীদের অনেকেই এমন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।
এর আগে বিকেল ৪ টার দিকে যশোর থেকে বিজিবির একটি দল হেলিকপ্টার যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে রইশুদ্দীনের মরদেহ পৌছে। পরে বিজিবি মরদেহটি এ্যামুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের শ্যামপুরে নিয়ে আসে। এ সময় বিজিবির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল নাহিদ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর ইমরুল কায়েস, সহকারী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন সহ বিজিবি’র কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোমবার ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে । এ সময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারী করার সময় চোরাকারবারীদের ধরতে সিপাহী রইস উদ্দীন দলছুট হয়ে সীমান্তে এগিয়ে গেলে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে মারা যান।