নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুু’পক্ষের মারামারির ঘটনায় প্রতিপক্ষ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের ঢুলিপাড়া গ্রামে মৃত কুদ্দেশ আলীর ছেলে জিয়ারুল ইসলামের পরিবারের সাথে একই গ্রামের নসরুল ইসলামের স্ত্রী পানতারার সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে মারামারি হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে। এরপর স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করেন পানতারা বেগম।
মিমাংসার একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে বসার সময় নির্ধারন করা হলেও বাদী নিজেই সেই সালিশে উপস্থিত না হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি আদালত আমলে নিলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্তে আসার পর থেকে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের ৮৪পি/২০২৩ নং মামলা সূত্রে এবং জানা গেছে, ঢুলিপাড়া গ্রামে মৃত কুদ্দেশ আলীর ছেলে জিয়ারুল ইসলামকে ১ নং আসামী ও একই ইউনিয়নের সদাশিবপুর টিকোশ গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আবু সালেক কে আসামী করা হয়েছে। কিন্তু মামলার বাদীর বাড়ি থেকে আবু সালেক এর বাড়ি প্রায় ২ কি.মি দূরত্বে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের ঢুলিপাড়া গ্রামে সরজমিনে গিয়ে মামলার বাদী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে জিয়ারুল ইসলামের পরিবারের সাথে একই গ্রামের নসরুল ইসলামের স্ত্রী পানতারার সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে মারামারি হয়। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করেন পানতারা বেগম। মিমাংসার একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে বসার সময় নির্ধারন করা হলেও বাদী নিজেই সেই সালিশে উপস্থিত হননি।
এব্যাপারে মো. জিয়ারুল ইসলাম জানান, তাঁর পরিবারের সাথে পানতারা বেগমের সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে গিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে হালকা হাতাহাতি হয়েছে। এতে পানতারা বেগম মেম্বার চেয়াম্যানকে অভিযোগ দিলে মিমাংসার জন্য ডাকলে আমরা উপস্থিত হই। কিন্তু যে বাদী সে নিজেই হাজির হয়নি সালিশে।
তিনি আরো বলেন, আমার পরিবারের সাথে ঝগড়া হয়েছে ঠিক আছে, বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছে তাও ঠিক আছে কিন্তু পানতারা সালিশে না গিয়ে আদালতে গিয়ে ধর্ষণ মামলা করেছে এটা মেনে নেয়ার নয়। এছাড়া এ মামলায় সদাশিবপুর টিকোশ গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. আবু সালেক কে আসামী করা হয়েছে। এটাও ঠিক করেনি। আবু সালেকের বাড়ি কোথায়, আর আমার বাড়ি কোথায়?
এদিকে মো. আবু সালেক বলেন, আমার বাড়ি সদাশিবপুর টিকোশ গ্রামে। আমি প্রতিদিন সকালে কানসাটে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে আসি। ঢুলিপাড়ায় কখন কি ঘটেছে তা আমার জানা নাই। কিন্তু মামলার তদন্ত আসলে জানতে পারি আমাকে ধর্ষণ মামলার আসামী করা হয়েছে। যে মহিলা আমাকে আসামী করে মামলা করেছেন তার সাথে আমার কোন-ই সম্পর্ক বা পরিচিত না। আমাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য কেউ আমার নাম দিয়েছে।
এব্যাপারে মামলার বাদী পানতারা বেগম বলেন, আমার সাথে ঝগড়া হয়েছে, আমাকে মারধর করেছে, তার অভিযোগ করেছি। তার বিচার চেয়েছি। আমি কোন ধর্ষনের অভিযোগ বা মামলা করিনি। মামলার ব্যাপারে জালাম ডাক্তার আর বুদ্ধুরাজ সব জানে। আমি মামলার খরচের জন্য তাদের ১৭ হাজার টাকা দিয়েছি।
এদিকে, ডা. মো. জামাল উদ্দিন ও বুদ্ধুরাজ পানতারা বেগম মামলা দায়ের বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান। পানতানার সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নাই বলেও জানান তাঁরা।
শ্যামপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল খালেক জানান, ১০ সেপ্টেম্বর সকালে জিয়ারুল ইসলামের পরিবারের সাথে একই গ্রামের নসরুল ইসলামের স্ত্রী পানতারার সাথে তুচ্ছ ঘটনাকে নিয়ে মারামারি হয়। শিবগঞ্জ থানায় অভিযোগ করলে তদন্তকারী অফিসার আমাকে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করেন পানতারা বেগম। মিমাংসার একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে বসার সময় নির্ধারণ করা হলেও বাদী নিজেই সেই সালিশে উপস্থিত হননি।
এব্যাপারে মামলার বাদীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট আসমাউল হুসনা বলেন, মামলার বাদী আমাকে যেভাবে ঘটনার বিবরণী দিয়েছেন আমি সেইভাবে এজাহার দায়ের জন্য আদালতে আবেদন করি। পরবর্তীতে আদালত আবেদনটি আমলে নিলে এজাহারে অর্ন্তভূক্ত হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের মামলা নং ৮৪পি/২০২৩।