নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্তিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি দীর্ঘদিন যাবৎ অনুপস্থিত থাকা সত্যেও তাঁর চাকুরী বহলতবিয়তে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার সহ-সুপার অনুস্থিত থাকার কারণে সকল শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যহিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের মূল্যায়নকৃত পাঠ্যপস্তক শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিন হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফের কোষাধ্যক্ষ ও যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় আদালতে রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশে কারাবাস করছেন। যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর আজ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে পরিকল্পিতভাবে ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার বিচারকার্যও শেষ হয়েছে। বিচারকার্য শেষে ২০১৯ সালের ২০ জুন সহ-সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি সহ মোট ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। তবে, উচ্চ আদালতে আসামীরা আপিল করার জন্য রায় কার্যকর আদেশ অপেক্ষামান।
এদিকে, শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন ভাতার তথ্যবলি সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি’র ইনডেক্স নং-৬৮৭২৪০ ও এমপিও’র ইনডেক্স নং-আর ৬৮৭২৪০। যা তাহার নামে প্রতিমাসে বেতন ভাতা তালিকায় নাম প্রকাশ করা হয়।
এমপিও বাতিল না হওয়ার কারণে কয়েক বছর থেকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট নিরসন করা হচ্ছে না বলে জানান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তাঁর জন্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যাপক ব্যহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন। তার এই অনুপস্থিতির জন্য বিপাকে পড়েছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকগণও চাইছেন এই সমস্যার সমাধান যেনো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
এব্যাপারে নিহত মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী রহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, নিহত মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী রহিমা বেগম অভিযোগ করেছেন, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি সহ-সুপার পদে এখনো স্বপদে বহাল রয়েছে। আদালতে রায় হওয়ার পর থেকে ম্যানেজিং কমিটির তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করলেও এমপিও বাতিল হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীকে আসামীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আদালতেও এর রায় দেয়া হয়েছে। আমি এ রায়ের প্রতি সন্তুষ্ট। তবে, আসামীদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আপিল করায় রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছি। আসামীদের রায় কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরদাবী জানাচ্ছি, যেনো সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে দ্রুত তার চাকরী থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্তিয়া দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আকবর হোসেন জানান, সহ-সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম ফাঁসির আসামী হওয়ার কারণে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। তাঁর জন্য আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছি। সহ-সুপারের ক্লাশগুলো আমাদের নিতে হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর বটে। তবে, শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাশগুলো নিতে পারা যায় না। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যহিত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কাঙ্খিত ক্লাশ থেকে।
তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস হলো সুপার আব্দুল মালেক স্যার অবসর নিয়েছেন। আমাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। আমার দায়ীত্বেও আগে সহ-সুপার মো. সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে তৎকালিন কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা আমি জানি না।
বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্তিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মাইনুল ইসলাম জানান, মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সি এখনো চাকুরীতে বহাল রয়েছে। তবে, তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখনো তার এমপিও বন্ধ হয়নি। এমপিও বাতিলের জন্য এখনো কোন আবেদন করা হয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জয়নাল আবেদিন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কম থাকলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্তিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার একটি ঘটনায় কারাবাস করছে বলে আমি শুনেছি। বিষয়টি আমি মাদ্রাসায় সরজমিনে গিয়ে পাঠদানের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলবো। যেনো শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা না হয়।
তিনি আরো বলেন, যেহতু আইন আদালতের বিষয়, আমার উর্দ্বেতন কর্তৃপক্ষের সাথে এবং আইনীজীবীদের আলোচনা করবো। আমিও মনে করি, বিষয়টি দ্রুত সমাধান হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটবে। উচ্চ আদালতে আপিল করা থাকলে তাহলে এমপিও তাহলে করা সম্ভব হবে না। কেননা, উচ্চ আদালতে তাঁর মামলা বিচারকার্য বহাল। বিচারকার্য সম্পূর্ণ না হওয়া এবং রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর এমপিও বাতিল কিংবা চাকুরীতে পূণরায় বহাল হবে না। তাই আইনী সকল প্রকার জটিলতা শেষে সহ-সুপার সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর দুপুরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আখেরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মুন্সিসহ আসামীরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মনিরুল ইসলামকে তাঁর শিয়ালমারা গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মনিরুলের স্ত্রী রহিমা বেগম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিচারকার্য শেষে ২০১৯ সালে ২০ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলাম মুন্সি মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত অন্যতম আসামী।