শিবগঞ্জে নৌকার প্রার্থী কোণঠসা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে তৃণমুল নেতাকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাত্র বাকী নয় দিন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনটি ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ৫২৬ কিলোমিটার এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭২ হাজার ২৮২ জন। পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৯জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ৪২৩জন। এ আসনে নির্বাচনে ৭জন প্রার্থী থাকলে মূলত ৩জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী হবে বলে ভোটারদের ভাষ্য।
৭জনের মধ্যে ৪জন নির্বাচনী আচরণ মেনে চললেও প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর প্রচারণা ও গণসংযোগ নীতিমাল উপেক্ষা করে চলছে প্রচারণা ও গণসংযোগ। ঘটছে অফিস পড়ানোসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। থানায় হচ্ছে জিডি ও মামলা। কিন্তু কোন কিছুই সমাধান হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ডজন খানেক ঘটনা ঘটেছে। এ আসনটি বিএনপি-জামায়াতের দখলে থাকলেও ২০০৮সালে আওয়ামীলীগের দখলে আসে এবং এপর্যন্ত নৌকার দখলেই রয়েছে। তবে নৌকার বিপরীতে এবার রয়েছেন ২জন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও কোণটসা হয়েছে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের অধীকাংশই নেতাকর্মীরা তাঁর পাশে না থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের ট্রাক প্রতীকের প্রচারে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর কেটলী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা। আর হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিক হাতে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল।
আগামী ৭ ই জানুয়ারি আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র সহ বিভিন্ন দলের ৭ প্রার্থী নির্বাচনের যুদ্ধে লড়াই করবেন। আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনী মাঠে মুলত লড়াই হবে ত্রি-মুখি।
সাধারণ ভোটার ও আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতা কর্মীরা নেতা শুন্য নেতা আখ্যায়িত করে অভিযোগ করেন ডা: শিমুল শুরু থেকে আওয়ামীলীগ ও এর অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। তাছাড়া তার আত্মীয়দের নানা ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে তাকে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল স্বতন্ত্র প্রার্থী শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের ট্রাক প্রতীকের কাছে বড় ধাক্কা খেয়ে মাঝ নদীতে নৌকার বৈঠা হারিয়ে ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা। সেই সাথে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও চাইছেন নদীর কুল হারিয়ে বৈঠাহীন নৌকা ডুবি। অন্যদিকে শতশত মটরসাইকেল নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোট ভিক্ষা চাইছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী।
সরেজমিনে উপজেলার শিবগঞ্জ পৌরসভা, নয়ালাভাঙ্গা, ছত্রাজিতপুর, দূর্লভপুর, দাইপুকুরিয়া, মোবারকপুর, চককীর্তি সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নারী-–পুরুষ ভোটারদের সাথে কথা বললে তারা মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলামই নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। কারণ তার রয়েছে ক্লিন ইমেজ, দানশীল, মানুষের সেবা করা, পারিবারিক ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে রয়েছেন।
সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়ে এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের অধীকাংশই নেতাকর্মীদের পাশে পেয়েই শতভাগ বিজয়ের আশা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পাশাপাশি নতুন ভোটাররা তাদের প্রথম ভোটটি ট্রাক প্রতীক দিবে বলে মতপ্রকাশ করেছেন অনেকে। এছাড়াও উপজেলাবাসীও চাই এমপি হিসেবে নতুন মুখ।
গণসংযোগকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন নেত্রীর ইঙ্গিতে ও জনগণের চাপেই আমি নির্বাচন করছি। আওয়ামীলীগ ও এর অংগ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনেই প্রচারণা ও গণসংযোগ করছি। আমি সাড়ে ৪ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে উপজেলা সাধারণ মানুষের সাথে মিশে দেখেছি তাদের কাঙ্খিত সেবা পাননি। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের সেবা দিয়ে পাশে থাকার। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বা সাধ্য কতটুকু? তাই সাধারণ মানুষের ভালবাসা পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছি।
তিনি আরো বলেন, উপজেলাবাসীর দাবি নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলতে চাই। জনগণের প্রথম দাবি, জেলা অর্থকরী ফল আমের জাতকরণ প্রক্রিয়া, সোনামসজিদ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেললাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের চারলেন সড়ক প্রস্থ্য, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা রাস্তা পাঁকাকরণ, মাদক বিরোধী, যুব সমাজকে উজ্জিবিত করা, বেকারত্ব দূরীকরণ, বেকার যুব নারীদের কর্মসংস্থানসহ সামাজিক সকল উন্নয়নমুলক কাজ করবো।
এদিকে, দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছেন এবং দেশ সেবা করে যাচ্ছেন। অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। শিবগঞ্জের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সন্ত্রাসমুক্ত শিবগঞ্জ রাখতে অবশ্যই নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিবগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় জনগণ আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহতি রাখবে। স্বতন্ত্র প্রর্থীর কোন অফিস ভাংচুর হয়নি। যেটুকু হয়েছে তা তাদেরই ষড়যন্ত্র। স্বতস্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপার তিনি বলেন, তারা অপব্যাখ্যা করছেন। দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে যাওয়া কোন সুযোগ নাই। যারা দলীয় প্রার্থীর বাইরে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন, নির্বাচনের পরে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠিকভাবে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরজমিনে আরেক হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী কয়েক স্থানে দেখা গেছে তার বিশাল মোটরসাইকের শোডাউন, কার ও মাইক নিয়ে প্রচারণা ও গণসংযোগ। তবে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে রাজী হননি।
এ আসনটিতে জাতীয় পার্টি, এনপিপি, বিএনএফ ও বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের আরও ৪জন প্রার্থী থাকলে তারা কেউই প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসার মতো প্রার্থী নন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল (নৌকা), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ট্রাক), গোলাম রাব্বানী (কেটলি), নবাব মোঃ শামসুল হোদা (মমবাতি), নুরুল ইসলাম জেন্টু (টেলিভিশন), মোঃ আব্দুল হালিম (আম) ও মোঃ আফজাল হোসেন (লাঙ্গল)।