শিবগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে অগ্রগামী চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেঁয়াজ বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা জাতীয় ফসল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পেঁয়াজ ছাড়া একটা দিন কাটানোর কথা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। সকল পদের খাবারেই যেন এটা আবশ্যক। কৃষি বিপণণ অধিদপ্তরের মতে আমাদের দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার পরিমাণ ২৬.৫ লক্ষ মে.টন, আর উৎপাদন হয় প্রায় ৩৩.৫ লক্ষ মে.টন। বাড়তি উৎপাদন হলেও প্রায় সবটাই হয় রবি মৌসুমে, সারা বছর সংরক্ষণ করতেই যার ২৫-৩০ শতাংশ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে দেশে বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। আর এ সুযোগে কিছু কুচক্রী স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দেন ও গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে। তবে আশার কথা হলো যে, দেশে এখন অসময়েও পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। যা বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে অগ্রগামী চাষীরা। সরেজমিনে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার কৃষকগণ নাসিক-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।


পেঁয়াজ চাষী ছোট হাদীনগর গ্রামের মৃত আঃ সাত্তারের ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম জানান, এবছর আমি উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রণোদনার আওতায় নাসিক-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ পেয়েছি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সার্বিক পরামর্শে এ জাতের পেঁয়াজ চাষাবাদ করছি। তিনি আরো বলেন, এ জাতের পেঁয়াজ চাষে সময় কম লাগে, পাশাপাশি ফলন স্থানীয় জাতের চেয়ে অনেক বেশি, অসময়ে উৎপাদন হয় এবং ভাল দাম পাওয়া যায়। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে প্রায় ৬০মন পেঁয়াজ পেয়েছি যার বাজার মূল্য পেয়েছি প্রায় ২ লাখ টাকা। আগামীতে আমরা আরও বেশি জমিতে এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করবো।
শিবগঞ্জ পৌরসভার পেঁয়াজ চাষী দুরুল হক বলেন, এক একর জমিতে তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ চাষাবাদ করেছি ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং পরামর্শ নিচ্ছি। এছাড়া ধোবড়া গ্রামের তৌফিক আলী, পারকালুপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, মাসুদ রানাসহ কয়েকজন কৃষি অফিসের পরামর্শে গতবারের চেয়ে এবছর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন বলে জানান। যা দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি।
এদিকে, উপজেলা কৃষি অফিস ও পরিসংখ্যানের তথ্য মতে জানা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে ২৪’শ হেক্টর জমিতে বারি পেঁয়াজ-১, তাহেরপুরী, সুকসাগর সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ চাষাবাদ করা হয় যার মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৪’শ মে.টন। এরপর খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে কৃষি পূণর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় ৯৫০জন কৃষকের মাঝে নাসিক-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করা হয় যার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ হাজার ৯’শ মে.টন।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলায় গত রবি মৌসুমে ২হাজার ৪’শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৮হাজার ৪’শ মে.টন শীতকালীন এবং খরিপ মৌসুমে কৃষি পূণর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় প্রায় ১১৫ হেক্টর জমিতে অসময়ে নাসিক-৫৩ জাতের ১ হাজার ৭৩০ মে.টনের মত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়েছে এবং আরও ১১ হেক্টর জমিতে এ জাতের উত্তোলন উপোযোগী পেঁয়াজ মাঠে রয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে আমরা প্রায় ২হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ৪৫হাজার ৩৯০ মে.টন শীতকালীন পেঁয়াজ এবং আগামী খরিপ মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ হাজার মে.টন গ্রীষ্মকালীন নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের আমরা সকল সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।