নিহত বিজিবি সদস্যের বাড়িতে শোকের মাতম: শিশু ২সন্তান নিয়ে স্বামীর লাশের অপেক্ষায় নির্বাক নাসরিন

বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের বাড়িতে শোকের মাতম:
শিবগঞ্জে শিশু ২ সন্তান নিয়ে স্বামীর লাশের অপেক্ষায় নির্বাক নাসরিন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য রইসউদ্দীন নিহতের ঘটনায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শিশু ২ সন্তান নিয়ে স্বামীর লাশের অপেক্ষায় নির্বাক স্ত্রী নাসরিন খাতুন। পাশে বসে অঝড়ে কাঁদছেন নিহত রইস উদ্দীনের মা রহিমা বেগম। ছেলের বউয়ের পাশে বসে নাতনীকে কোলে নিয়ে শাশুড়ি রহিমা বেগম তো অঝড়ে কাঁদছেন। আর বলছেন, কেন তাঁর ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করেছে তার সন্তান? এসময় তিনি তার সন্তানের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন সরকারের কাছে।
নিহত রইস উদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামে। কৃষক কামরুজ্জামানের ৫ সন্তানের মধ্যে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় ভাই সেনাবাহিনীতে, মেজ ভাই বিজিবিতে এবং ছোট ভাই যশোর সীমান্তে বিজিবির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা যান।


মঙ্গলবার বিকেলে রইস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে গিয়ে দেখা যায়, রইস উদ্দীনের টিনের একচালা একটি ঘর ও রান্না ঘর তালাবদ্ধ। বাড়ির প্রধান ফটক টিতে নেয় কোন দরজা। চলমান শৈত্য প্রবাহের কারণে ২ শিশু সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী পাশেই রইস উদ্দীনের বড় ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছেন। বিএসএফের গুলিতে স্বামী মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতেই গ্রামবাসীরা একনজর দেখতে ভিড় করছেন।
রইসউদ্দীনের পিতা কামরুজ্জামান তাঁর ২ নাতি-নাতনিকে যেন যোগ্য সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম হোসেন দাবী করেন, গতবার গ্রামে এসে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার পর কয়েকটি জানালা বানিয়ে দেয়ার আশ^াস দেন। তাঁর মত একজন সমাজ সেবককে তারা আজ হারালেন। তার দাবী সরকার এ অসহায় পরিবারটির পাশে যেন দাঁড়ায়।
স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোসা. শাহনাজ পারভিন লিলি জানান, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তাঁর এলাকার একজন শহীদ হয়েছেন। তাই সরকার যেন যথাযথ মর্যাদায় দ্রুত লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
উল্লেখ্য, ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোমবার ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারী করার সময় চোরাকারবারীদের ধরতে সিপাহী রইস উদ্দীন দলছুট হয়ে সীমান্তে এগিয়ে গেলে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে মারা যান।